আমাদের দেশের গরুর ঘানিতে ভাঙানো খাঁটি সরিষার তেল এখন বিলুপ্তপ্রায়!
সাধারনত মানুষ আজও খাঁটি সরিষার তেল বলতে ঘানিতে ভাঙানো খাঁটি সরিষার তেল বুঝিয়ে থাকেন। ঘানিতেভাঙা তেলের এই ব্যাপক চাহিদার এখন পুরো দেশ জুড়ে। কিন্তু আধুনিক মেশিন নির্ভর শিল্প ও প্রযুক্তির প্রসারের কারনে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ঘানি-শিল্প।
দিন দিন আমরাও আধুনিকতার ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছি। আধুনিকতা আমাদেরকে অলসতা এনে দিয়েছে। সে-রকম ভাবেই আধুনিকতার ভিড়ে আমাদের দেশ হতে ক্রমশই হারিয়ে যাচ্ছে ঘানি শিল্প। আমরা অনেকে জানি না, ঘানিতে ভাঙানো খাঁটি সরিষার তেল কিভাবে তৈরি হয়?
বর্তমানে একশত শতাংশের আশি শতাংশ সরিষারই তেল তৈরি হয়ে থাকে আধুনিক পদ্ধতিতে লোহার মেশিনের সাহায্যে। যেখানে খুব সহজেই, স্বল্প পরিশ্রমেই প্রতিদিন ১০-১২ টনের ও বেশি সরিষার তেল উৎপন্ন হয়ে থাকে।
সরিষার তেল তৈরিতে অনেক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তেলকে অনেক দিন যাবত সংরক্ষণ করে রাখার জন্য যাতে করে তেল সহজে নষ্ট না হয়।
কিন্তু এই রাসায়নিক পদার্থ আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনেক কম সময়ে বেশি তেল উৎপাদনের আশায়, সরিষার তেল তৈরিকৃত সরঞ্জাম গুলোকেও ঠিক ভাবে পর্যবেক্ষন করে নেওয়া হয় না।
ঘি এর অনেক উপকারিতা থাকলেও, ভেজাল ঘি খেয়ে কোন উপকার হবে না।খাটি ঘি না চিনলে সহজে ভেজাল ঘি কিনে প্রতারিত হতে পারেন। তাই খাটি ঘি চেনার এই আর্টিকেল টি পড়ে আসতে পারেন।
অথচ সেটাকেই বতলের গায়ে খাটি সরিষার তেল লিখে দেশে বিদেশে প্রতিটি জায়গায় রপ্তানি করা হচ্ছে। অন্যদিকে অনেক দিন ব্যবহারের ফলে একটা সময় পর সরিষার তেল উৎপাদিত লোহার তৈরিকৃত মেশিনে মরিচার সৃষ্টি হয় এবং তেল উৎপাদনের সময় মরিচাকৃত লোহা তেলে মিশে যায়।
কিন্তু আমাদের ক্ষতির কথা জেনেও প্রতিদিন প্রতিনিয়ত আমরা আধুনিক পদ্ধতিতে তৈরিকৃত ভেজাল যুক্ত তেলে খেয়ে যাচ্ছি, প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরিকৃত ঘানিতে ভাঙানো খাটি সরিষার তেল এর অভাবে।
কিন্তু আমরা কি জানি, আজও বাপ-দাদার পেশার ঐতিহ্য হিসেবে এখনো কিছু মানুষ বহু কষ্টে টিকিয়ে রেখেছেন ঘানি শিল্পকে। এখন গ্রামে গেলে আমরা ঘানি শিল্পকে দেখতে পাই। খুব কম হলেও, টিকে আছে এই শিল্প গ্রামের দিকে।
প্রতিটি ঘানিকে ‘গাছ’ বলা হয়। গাছে একটি বিশেষ আকৃতির ছিদ্রের ভেতর দিয়ে তেল পড়ে এবং তা একটি ড্রামে সংরক্ষণ করা হয়। সাধারণত খাটি সরিষা হতে ঘানিতে সরিষার তেল তৈরী করা হয়ে থাকে।
ঘানিতে এক বিন্দু লোহার স্পর্শও থাকে না। এটা তৈরি হয় সম্পূর্ণ কাঠ দিয়ে। তাও অল্পস্বল্প নয়, লেগে যায় প্রায় রীতিমতো আনাম এক গাছ! একেকটি অংশ তৈরি করতে লাগে একেক ধরনের গাছ বা কাঠ। একেকটা অংশের নামও ভিন্ন ভিন্ন।
আট থেকে ১০ ফুট লম্বা একটা কাণ্ডের অর্ধেকের বেশি থাকে মাটিতে পোঁতা। ঘানির এটাই হলো প্রধান অংশ। এটাকে ডাকা হয় ‘গাছ’ নামে। গাছের ওপরে বেড় দেওয়া কাঠের একটা অংশ থাকে, ওটাকে বলে ‘ওড়া’।
এখানেই তেল তৈরির জন্য সরিষা ঢালা হয় এবং তাতে সামান্য পানিও ব্যবহার করা হয় । সরিষা পেষার জন্য লাগে লম্বা কাঠের একটা দণ্ড—এটা দেখতে অনেকটা ঢেঁকির ওঁচা বা ভারী মুগুরের মতো। এর নাম ‘জাইট’।
বেলগাছের কাঠ এর জন্য খুবই উপযুক্ত। জাইটকে চাপ দেওয়ার জন্য লাগে এক-দেড় হাত লম্বা এক প্রান্ত বাঁকা একটি কাঠ—এর নাম ‘ডেকা’। ডেকার বাঁকানো মাথা টুপির মতো বসে যায় জাইটের মাথায়।
খাটি ঘি এর ৬টি উপকারিতা জানেন কি? না জানলে জেনে নিন এখনই। হয়ত এটা আপনার স্বাস্থর জন্য অতি প্রয়োজনীয়!
অন্য প্রান্ত বাঁধা থাকে একটা ভারী মোটা তক্তার এক প্রান্তের সঙ্গে। এই তক্তাটার নাম ‘কাতাড়ি’। কাতাড়ির এক মাথা অর্ধচন্দ্রাকারে কাটা থাকে। গাছের কোমর বরাবর চারপাশ ঘিরে কাটা হয় একটা খাঁজ। যাতে খাঁজের ভেতরে কাতাড়ির অর্ধচন্দ্রাকার প্রান্তটা খাপে খাপে বসে গিয়ে অবিরত ঘুরতে পারে ও ঘোরার সময় পড়ে না যায়।
গাছের নিচের অংশে একটি ছিদ্র থাকে। ছিদ্রটার মুখে লাগানো থাকে একটা কাঠির মতো চিকন কাঠ। এর নাম কাতাড়ি। এটি দিয়েই ফোঁটায় ফোঁটায় তেল গিয়ে পড়ে নিচে রাখা পরিস্কার পাত্রে। অনেকটা যেমনভাবে খেজুরগাছের রস চুয়ে পড়ে হাঁড়িতে সেইরকম।
সবটাই কাঠের তৈরি। সরিষা পিষে তেল বের করার জন্য কাতাড়ির ওপর রাখা হয় ভারী কোনো জিনিস। কাতাড়ির সঙ্গে গরু বেঁধে চালাতে শুরু করলেই কাতাড়ির বোঝার চাপ গিয়ে পড়ে জাইটের ওপর আর তখন জাইটের পেষণে সরিষা থেকে তেল নির্গত হয়ে কাতাড়ি।
এভাবেই তৈরি হয় গরুর ঘানিতে ভাঙা খাঁটি সরিষার তেল।
চলুন দেখে নেই, আধুনিক যুগে কিভাবে সরিষা থেকে ঘানিতে ভাঙানো খাঁটি সরিষার তেল তৈরি হয়।
সময়ের সাথে সাথে মানুষ এখন আর ঘানিতে সরিষার তেল উৎপাদন করে না। এখন মেশিনের সাহায্য সরিষার তেল বানানো হয়ে থাকে। প্রথমে সরিষা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। অনেকে সরিষার চাষ করেন, অনেকে বা স্থানিয় বাজার থেকে কিনে আনেন।
সরিষা পরিষ্কার করার পর সেটা ভালো ভাবে রোদে শুকানো হয়। অনেক সময় সরিষাতে অনেক ময়লা থাকলে ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়ে থাকে। শরিষা ভালো ভাবে রোদে না শুকালে, ভালো তেল পাওয়া যায় না।
মশলা গুরো করার মিল এ সরিষা এবং অন্যান্য তেল ভাজ্ঞানোর জন্য আলাদা মেশিন থাকে। শুকনা সরিষা মেশিনে দেয়ার সময় হালকা পানির ছিটা দেয়া হয়ে থাকে। এতে করে তেল পরিমানে বেশি হয়ে থাকে। এবং তেল এ শরিষার সুন্দর গন্ধ পাওয়া যায়।
তবে তেল ভাজ্ঞানোর সময়ে পানির ছিটা দিলে সেই তেল ৬-৮ মাস পর্যন্ত ভালো থাকে। আর যদি কোন পানির ছিটা না দেয়া হয়, তাহলে সুন্দর গন্ধ অনেক কমে হালকা হয়ে যায়। তেল সামান্য কম হয় তবে সেই তেল ১ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে।
সাধারনত মিল মালিকেরা ব্যাবসা এর জন্য পানির ছিট দিয়ে সরিষা ভাজ্ঞিয়ে থাকে। অনেকে আছে আলাদা করে সরিষার গন্ধ যুক্ত করে থাকে। মনে রাখবেন, ঘানিতে ভাঙানো খাঁটি সরিষার তেল এ ঝাঝালো গন্ধ থাকে না বা গায়ে লাগলে জালা-পোরা করে না।
ব্লগের শুরুতে দেখেছেন ঘানি ভাজ্ঞা তেলের বিস্তারিত। আধুনিক যুগে এসে ঘানি ভাজ্ঞিয়ে তেল উৎপাদন লাভজন নয়। তবে মেশিন দিয়ে যে তেল উৎপাদন হয় সেটাও কিন্তু খাটি এবং সব খাদ্যগুন সঠিক থাকে।
এবং সর্বোত্তম স্বাস্থ বিধি মনে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরিকৃত ঘানিতে ভাঙানো খাটি সরিষার তেল।
ইকিনি তে পাচ্ছেন, আধুনিক মেশিনে ভাজ্ঞানো এবং কঠোর ভাবে মান নিয়ন্ত্রিত খাটি শরিষার তেল। ঢাকার মধ্য হোম ডেলিভারির সুযোগ রয়েছে। অর্ডার করতে ইকিনির শপ বা ফেজবুক পেইজ ভিজিট করতে পারেন।